Comic Story
Panel 1
গভীর অরণ্যে, পাশাপাশি বাস করত ভালুক ও শেয়াল। তাদের বন্ধুত্ব ছিল গভীর, যেন একে অপরের পরিপূরক। সূর্যের সোনালী আলো গাছের ফাঁক দিয়ে এসে তাদের বন্ধুত্বকে আরও উজ্জ্বল করে তুলত। ভালুক, বিশাল শরীর আর শান্ত স্বভাবের, আর শেয়াল, চঞ্চল ও ধূর্ত। তারা প্রায়ই একসাথে বনপথে ঘুরে বেড়াত, গল্প করত, আর ভাগ করে নিত বনের ফলমূল।
Panel 2
একদিন ঘুরতে ঘুরতে তারা এসে পৌঁছল নদীর ধারে, যেখানে ছিল এক পুরনো শ্মশান। আগের রাতে গ্রামের লোকেরা এক মৃতদেহ দাহ করতে এসেছিলো, কিন্তু ঝড়ের কারণে কাজ অসমাপ্ত রেখেই পালিয়ে যায়। অর্ধপোড়া দেহটি তখনও পড়ে আছে। শেয়ালের চোখ পড়তেই জ্বলে উঠল লোভের আগুন। 'আহা! আজ কার মুখ দেখে উঠেছিলাম!' সে ভালুককে বলল, 'দেখো কী স্বাস্থ্যবান মানুষের দেহ! চলো, এক্ষুণি এটা খাই!' শেয়ালের মুখ দিয়ে লালা ঝরতে লাগল।
Panel 3
ভালুক শেয়ালের কথা শুনে হেসে বলল, 'তুমি খাবে খাও। আমি তোমার মতো নীচ নই। মরা মানুষ খাওয়া দূরের কথা, আমি স্পর্শও করি না।' ভালুকের চোখে স্পষ্ট বিরক্তি। সে মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল। তার মনে হলো, এমন জঘন্য প্রস্তাব শুনে শেয়ালের সাথে বন্ধুত্ব রাখা উচিত কিনা।
Panel 4
শেয়াল কিন্তু মোটেই লজ্জিত হল না। বরং সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল, 'বন্ধু, তুমি যা বললে সবই ঠিক, কিন্তু কথা হচ্ছে, তুমি যদি জ্যান্ত মানুষ দেখলেই তাকে মেরে না ফেলতে, তাহলে আমিই জোর গলায় বলতাম—তুমি আমার চেয়ে উচ্চশ্রেণীর প্রাণী এবং মহৎ!' শেয়ালের চোখে ধূর্ত হাসি। সে ভালুকের দুর্বলতা জানে এবং সেটা ব্যবহার করতে দ্বিধা করছে না।
Panel 5
ভালুক কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। শেয়ালের কথায় সে যেন কিছুটা থমকে গেল। তার মনে নিজের হিংস্র স্বভাবের কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। সে বুঝতে পারল, বাইরে থেকে ধার্মিক দেখালেও, তার ভেতরের পশুত্ব শেয়ালের চেয়ে কম নয়।
Panel 6
শেষমেশ ভালুক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, 'হয়তো তুমি ঠিকই বলেছ, বন্ধু। আমাদের দুজনের মধ্যেই পশুত্ব লুকিয়ে আছে। পার্থক্য শুধু, আমি স্বীকার করি, আর তুমি করো না।' এই কথা বলার সময় ভালুকের কন্ঠে ছিল গভীর হতাশা ও আত্মসমালোচনা।
Panel 7
শেয়াল প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, 'তাতে কী? আমরা তো বন্ধু। আর বন্ধুরা সবসময় একে অপরের ভালো-মন্দ দিকগুলো জেনেই পাশে থাকে, তাই না?' সে ভালুকের কাঁধে হাত রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি দিল।
Panel 8
ভালুক হালকা হাসল। শ্মশানের নীরবতা ভেঙে তারা আবার একসঙ্গে বনের পথে হাঁটা দিল। তাদের বন্ধুত্ব হয়তো আগের মতো নেই, কিন্তু তারা একে অপরের প্রতি সৎ থাকার চেষ্টা করতে লাগল। তারা বুঝতে পারল, সত্যিকারের বন্ধুত্ব মানে একে অপরের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে একসঙ্গে পথ চলা।